শুভ কামাল : বাংলাদেশে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ জিডিপির ২%।  ইরানের শিক্ষাখাতে বরাদ্দ প্রায় জিডিপির ২০% এর কাছাকাছি। অর্থাৎ ইরানিয়ানরা খেয়ে না খেয়ে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ঠিক রেখেছে, এই হার অনেক উন্নত দেশের চেয়েও বেশি। ২০১৮ সালে ইরান থেকে পিয়ার রিভিউড জার্নাল বের হয়েছে ৫০০০০। যা সারা পৃথিবীর মোট রিসার্চের প্রায় ১২%। বিশায়ায়ায়াল ব্যাপার। তাদের রিসার্চের গুণগত মান নিয়ে মাঝে মাঝে কেউ প্রশ্ন তুলে। যেমন পুরো বিশ্বের ১২% জার্নাল তাদের হলেও, তাদের জার্নালের সাইটেশন পুরো পৃথিবীর সাইটেশনের ৪%। এই ৪% ও কম কথা নয়, কিন্তু ১২% এর তুলনায় কম আরকি।

তবে তাদের এডুকেশন কি সুফল বয়ে আনছে তা বুঝতে শুধু সাইটেশন এর সংখ্যা দেখলে হবে না। দেখতে হবে এসব গবেষণা কাজে লাগিয়ে তারা বাস্তবে কি করছে। সম্প্রতি তারা নিজেদের সিটি স্ক্যান মেশিন আবিষ্কার করেছে। এমনিতে এসব মেশিনের দাম ৫ থেকে ৭ লাখ ডলার, ইরানিয়ানরা সেইগুলা ২ লাখ ডলার কমে বিক্রি করলে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিও করতে পারবে। তারা মিসাইল আর ড্রোন টেকনোলজিতেও সফলতা অর্জন করেছে। তারা গত বছর ২ বিলিয়ন ডলারের সমরাস্ত্র বিক্রি করেছে। মূল ক্রেতা রাশিয়া। তাদের সবচেয়ে বড় স্ট্রেংথ তাদের জিনিস সস্তা, কিন্তু এফেক্টিভ। এক ড্রোন দিয়েই পুরো মধ্যপ্রাচ্যের খেলা তারা বদলে দিচ্ছে। এই ইরানি ড্রোনের কারণেই ইউক্রেন যুদ্ধও রাশিয়ার পক্ষে চলে গেছে।

ইরান বিমানের ইঞ্জিন ওভারহল করতে পারে। সব প্লেনের ইঞ্জিন নির্দিষ্ট সময় পর পর ওভারহল করতে হয়। মূলত আমেরিকা আর পশ্চিমা দেশেই সেটা করা হতো। এখন ইরানও সেটা করে, আর তাদের আশেপাশের সব কম পয়সাওয়ালা দেশেরা এখন ইরানেই ইঞ্জিন ওভারহল করায়। 

অথচ... ৩৫ বছর আগে ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় তারা নিজেরা একটা কামানের গোলাও উৎপাদন করতে পারতো না। পারস্য সাম্রাজ্য পৃথিবীর পুরনো সাম্রাজ্য। গ্রীক, মিশরীয়দের মতো পার্সিয়ানদের তথা ইরানীদেরও এনসিয়েন্ট হিস্ট্রি অনেক সমৃদ্ধ, হাজার হাজার বছর পুরানো। যখন প্রাচীন গ্রীসে ছিল পার্থেনন, সমসাময়িক কালে পারস্যেও ছিল একইপ্রকার ‘পার্সোপোলিস’। তাদের সাথে কোনোভাবে আরবদের ইতিহাসের তুলনাও করা যায় না।

রাহুল সাংকৃত্যায়নের ‘ইরান’ নামে একটা বই আছে, পড়ে দেখতে পারেন। বলা হয়ে থাকে ফর্ম ইজ টেম্পোরারী, কিন্তু ক্লাশ ইজ পার্মানেন্ট। এম্পায়ারের উত্থান পতন থাকে। ইরান যেভাবে নিভৃতে গত কয়েক যুগে তাদের কালো যুগ কাটিয়ে ফিরে আসছে, বলা যায় না পৃথিবীর ইতিহাস সামনে অন্যভাবেও লেখা হতে পারে। এর জন্য তারা মূল বাজি ধরেছে শিক্ষায়...। ফেসবুকে ২৬-১২-২৩ প্রকাশিত হয়েছে।